Jump to content

User:Farhan Sadik

From Wikipedia, the free encyclopedia
  1. ইসলামে নারীর মর্যাদা★★★

★★★★★★★★★★★★★★★★ এক ছাহাবী রাঃ এসে রাসুলুল্লাহ ছঃ এর হাতে পবিত্র ইসলাম ধর্মে দাখিল হয়েছেন। এখন ছাহাবী নবী পাক ছঃ কে জিজ্ঞেস করলেন- "ইয়া রাসুলুল্লাহ, আমার কি পূর্বকৃত সমস্ত গোনাহ মাফ হয়ে গেছে?" রাসুল ছঃ বলেন- "হ্যাঁ, তোমার পূর্বকৃত সমস্ত গোনাহ আল্লাহ তা'য়ালা মাফ করে দিয়েছেন, এখন তুমি মুসলমান হয়েছো। মুসলমানের সমস্ত কর্তব্য তোমার উপর ন্যস্ত হয়েছে।" ছাহাবী বললেন, "ইয়া রাসুলাল্লাহ, আমি আইয়্যামে জাহিলিয়াতের যুগে এমন কাজ করেছি, তা বলছি শুনুন; আমার এক কন্যা সন্তান ছিল। সে ফুটফুটে সুন্দর হয়ে কিছু বড় হয়েছে। কিন্তু আমার মনে বারবার উঁকি মারে দিচ্ছে, এই মেয়ে সন্তানটি আমার কাল, একে হত্যা করতে হবে। একদিন মেয়েটির মাকে বললাম ভালো রকম সাজিয়ে গুছিয়ে মেয়েটিকে আমার সাথে দাও। আমি আত্বীয়বাড়ী যাব। যেমন বলা তেমনি কাজ। সুন্দর সাজসজ্জা পরে মেয়েটি আমার সাথে চলতে লাগলো। পথিমধ্যে জঙ্গল আর জঙ্গল। মেয়েটি বলছে- "আব্বা আর কতদূর"? আমি বললাম - "না, এই তো এসে গেছি। গভীর জঙ্গলে মেয়েকে দাঁড় করিয়ে আমি একটি গর্ত খনন করতে লাগলাম। আমার দাড়ীতে মাটি লাগছে। মেয়েটি বলছে, - "আব্বা, আপনার দাড়িতে মাটি লাগছে, এই বলে মেয়েটি আমার দাড়ি ঝেড়ে দিচ্ছে।" এই মেয়ে কেমন করে জানবে যে আমি পিতা হয়ে তারই জন্য এই মরণগর্ত খনন করছি। গর্ত যখন গভীর হল, আমি মেয়েটির হাত পা বাঁধতে লাগলাম। মেয়েটি বলল- "আব্বা আমার হাত পা বাঁধছেন কেন? আমি কি দোষ করছি আব্বা।" কোন কথা নেই, হাত-পা বেঁধে মেয়েটিকে গর্তে ফেলে মাটি দিতে থাকলাম। মেয়েটি বলল, "আব্বা আমাকে মেরে ফেলবেন না। আমি কোনদিন আব্বা বলে তোমাকে অপমান করব না। কেবল আমাকে বাঁচতে দিন। আমি ভিক্ষা করে খাবো। তোমাদের দোয়ারে আর যাব না আব্বা- আমাকে বাঁচান।" কিন্তু কে শুনে কার কথা। এমনি নিষ্ঠুরভাবে আমি আমার জ্যান্ত ফুটন্ত কন্যাটিকে গেড়ে ফেলেছি। এদিকে দয়ার নবী ছঃ-র চক্ষু থেকে টপটপ করে অশ্রু ঝরতে লাগল। বললেন- "এমন জঘন্য কাজও কি মানুষ করতে পারে!" ★★★ বিশ্বের সকল মনীষীদের মধ্যে কেবল রাসূলুল্লাহ ছঃ-ই মেয়েদের মুক্তির প্রথম বার্তা দিয়েছিলেন। "কোন ব্যক্তির কন্যাসন্তানকে ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর সে যেন তাকে জাহেলিয়াতের যুগের ন্যায় জীবিত কবর না দেয় এবং তুচ্ছ মনে না করে। তার পুত্র সন্তানকে উক্ত কন্যা সন্তানের উপর মনে না করে, তাহলে আল্লাহ তাকর বেহেশত্ দান করবেন।" (আবু দাউদ) নবী পাক ছঃ আরও বলেছেন -"যে তিনটি কন্যা বা তিনটি বোনকে লালন-পালন করে, তাদের শিষ্টাচার শিখায় এবং বয়োপ্রাপ্ত হওয়া পর্যন্ত তাদের প্রতি স্নেহশীল থাকে, আল্লাহ তা'য়ালা তাকে বেহেশতের ভাগ দেন।" (মিশকাত শরিফ) একমাত্র হযরত মুহাম্মদ ছঃ-ই ছিলেন সেই মহাপুরুষ- যিনি জগতকে দেখিয়ে এবং শিখিয়ে দিয়েছেন যে সন্তান-সন্ততি, পিতা-মাতা, স্বামী-স্ত্রী, নিজ বংশের অনাথ ছেলে-মেয়ে এবং আত্বীয়-স্বজনের পারস্পরিক অধিকার এবং দায়িত্বের কথা। এসব অধিকারকে তুলাদণ্ডে পরিমাণ করা যায় না। কোন চুক্তির মাধ্যমেও তা নির্ধারণ করা দুষ্কর। সুতরাং কোন অধিকার আদায়ের ক্ষেত্রে খোদাভীতি ও পরকালের ভয়ের বিকল্প নেই। একেই বলা হয় 'তাকওয়া' আর 'তাকওয়ার' সর্বপ্রথম এবং সর্বশ্রেষ্ঠ প্রবর্তক ছিলেন হযরত মুহাম্মদ ছঃ। ★★★ আমরা জানি যে মহানবী ছঃ-র আগমন ছিল পৃথিবী এবং পৃথিবীর মানুষের জন্যে আশীর্বাদস্বরূপ। তাঁর আগমনের মূল লক্ষ্যই ছিল মহান আল্লাহর মনোনীত দ্বীনে ইসলামের প্রচার, প্রসার এবং মানুষকে কলুষমুক্ত করে তার মুক্তি সাধন এবং মহান আল্লাহর অবতীর্ণ কালামের বাণীকে বিশ্ব মানবের কাছে পৌঁছে দেওয়া। এই ইসলামের বাণীকেই তিনি কথায় ও কাজে পৃথিবীর বুকে প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন। মানুব জীবনের কোন বিভাগ বা অধ্যায় নেই, যেখানে মহানবী ছঃ-র হিদায়ত ও পথ প্রদর্শনের প্রয়োজন নেই। জমাতবদ্ধ হয়ে নামাঝ আদায় করা থেকে শুরু করে স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক সম্পর্ক এবং পরিবার-পরিজনের লালন-পালন, এমনকি প্রস্রাব-পায়খানার এবং পবিত্রতা অর্জনের যাবতীয় প্রয়োজনীয় বিষয় হাদিছের গ্রন্থ সমূহে পরিপূর্ণভাবে বিদ্যমান রয়েছে। ★★★ হযরত মুহাম্মদ ছঃ-ই হচ্ছেন নারী জাতীর মুত্তির প্রথম প্রবক্তা। নারীকে তিনি দিয়েছেন কল্যাণময়ী, মহিমাময়ী ও পূণ্যময়ী রূপ। নবী ছঃ-র আগমনের পূর্বে জগতের সর্বত্র নারীকে অস্থাবর সম্পত্তির মতো মনে করা হত। আরবে তে আর কথাই নাই, নারী সন্তান হলেই তাকে জীবন্ত কবর দেয়া হত অথবা হত্যা করা হত। কি ভারতবর্ষ, কি বাংলাদেশ, কি চীন, কি মিশর, কি আরব, কি ইউরোপ কোথাও নারীর কোন স্বতন্ত্র অস্তিত্ব ছিল না। নারীকে দাসীর মতো মনে করা হত এবং তাকে পণ্য সামগ্রীর মত ব্যবহার করা হত। এমনকি সভ্যতার লীলাভূমি এ ভারতবর্ষে নারীর পদমর্যাদা খুব উন্নত ছিল না। বৈদিক যুগে কোন কোন ক্ষেত্রে নারীর অধিকার থাকলেও সাধারণতঃ তারা পুরুষের কৃপার পাত্রীরূপে পরিগনিত হত। সিন্ধু সভ্যতার মহেজ্ঞোদাড়োতে এক মূর্তি পাওয়া গেছে- সেখানে এক পুরুষের পা এক নারীর পেটের উপর রয়েছে এবং নারীটি করজোড়ে পুরুষের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছে। এসব স্থাপত্য ও ভাষ্কর্য নারীদের তৎকালীন অবস্থান স্পষ্ট করে দিচ্ছে। ★★★ এ সম্বন্ধে অধ্যাপক চারুচন্দ্র বন্দোপাধ্যায় "বেদবাণী" থেকে কিঞ্চিৎ উদ্ধুতি লক্ষ্য করুন- "বৈদিক যুগে বিবাহ ধর্মানুষ্ঠানে পরিণত হয়েছিল। বৈধিক যুগে বাল্য বিবাহ হত না। বহু যুবতীর বিবাহ হতই না, তারা কুমারী হিসেবে পিতৃগৃহে থাকত। বিকলাঙ্গ ও পঙ্গু মেয়েদের বিয়ে হত না। বিয়ে হয়ে গেলে কন্যা সন্তানের পিতার সম্পত্তিতে তাদের কোন অধিকার থাকত না। এজন্য কন্যার ভ্রাতারা ভগিনীর বিবাহ দিতে চেষ্ঠিত থাকত। বিধবা বিবাহ প্রচলিত ছিল। বিধবারা প্রায়ই স্বামীর ভ্রাতাকে বিবাহ করত। এজন্য স্বামীর ভ্রাতার নাম হয়েছিল দেবর (দ্বিতীয় বর)। পুরুষেরা বহু বিবাহ করত। স্ত্রী-পুরুষ উভয়েরই ব্যভিচার ছিল অত্যন্ত নিন্দনীয়। কন্যাহরণ করেও বীরগণ বিবাহ করত। বিধবা হলে পত্নী পতির চিতায় শয়ন করে দেবরের আহ্বানে উঠে আসত ও পতির শবদাহ হত। (বেদবাণী, ৩২৪-৩২৭) ★★★ সুতরাং বোঝা যাচ্ছে ভারতীয় নারীর মর্য্যাদা এবং সম্ভ্রম খুব বেশি ছিল না। নানাভাবে তারা লাঞ্চনা ভোগ করত। অবশ্য গার্গী, উভয়ভারতী, সীতা, সাবিত্রী ইত্যাদি সমহিমাময়ী ও বিদূষী রমণী যে সমাজে ছিল না, তা নয়। তবে সাধারণতঃ নারীর অবস্থা খুব উন্নত ছিল না। ★★★ নারীর লাঞ্চনা চরমে উঠেছিল খ্রিস্টানদের হাতে। নারী যে চির অভিশপ্ত, নারীই যে সকল অকল্যান ও সকল পাপের মূল এটা শুধু সংস্কার ছিল না, বরং বিষয়টী তাদের অন্তরে ও কর্মবিশ্বাসের অন্তর্ভূক্ত ছিল। তারা বলে Adam ও Eve যখন স্বর্গে ছিলেন, তখন Eve- ই শয়তানের প্ররোচনায় প্রথম মুগ্ধ হন। তারপর আল্লাহ তা'য়ালার আদেশ লংঘন করে নিজ জ্ঞানে বৃক্ষের ফল ভক্ষণ করেন। "-And the man said, the Woman whom thuo garest to be with me. She gave me of the tree and I dit eat." -Genesis- 3. সেই পাপের জন্যই আল্লাহ Adam ও Eveকে স্বর্গ থেকে বিদায় করে দুনিয়ায় পাঠিয়ে দেন। Adamএর এই পতনে সমগ্র মানব জাতির পতন হয়েছে। আর এ পতনের মূল কারণ হচ্ছে Eve, Adam নন। অন্য কথায় নারী জাতিই হচ্ছে সকল পাপের মূল উৎস। খ্রিস্টান পাদ্রীগণ নারী জাতিকে "শয়তানের যন্ত্র" "Organ of the Devil" কামড় দেবার জন্য সর্বদা প্রস্তুত বিচ্ছু, "A Scorpion ever ready to sting" ইত্যাদি আখ্যায় বিভূষিত করে রেখেছেন। ★★★ সেই মূচিভেদ্য তমিস্রা ভেদ করে হযরত মুহাম্মদ ছঃ -র কণ্ঠে জাগরণ ধ্বনি উত্থিত হলো- কোন কন্যা সন্তানকে জীবন্ত কবর দেওয়া বা হত্যা করা বন্ধ করে পিতা তাকে পুত্র সন্তানের অনধিক মনে না করে প্রতিপালন করবে, আল্লাহ তাকে বেহেশত দান করবেন। জাগরণ ধ্বনি ভেসে উঠল- কেউ তিনজন কন্যা ব তিনজন ভগিনীকে লালন করবে, শিষ্টাচার শেখাবে, তাদের প্রতি স্নেহশীল থাকবে, আল্লাহ তাকে বেহেশতের ভাগ দেবেন ইত্যাদি। নারীজাতিকে উপেক্ষা করা ইসলামে সর্বতোভাবে নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়েছে। ইসলামে নারিকে মায়ের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে- নারীকোন নবী না হলেও নবীগণের মা। "নারীর পায়ের নীচে সন্তানের বেহেশত" একথা প্রথমে নবী ছঃ -ই ঘোষনা করেছেন। নারীগণ সার্থক শিক্ষক, "হযরত আয়েশা সিদ্দিক্বা" তার উদাহরণ। নারীগণ শিক্ষালাভ করতে পারে, শিক্ষকতা করতে পারে, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হতে পারে, বিভিন্ন নূতন বিজ্ঞানের আবিষ্কার করতে পারে, হাকিম হয়ে বিচার করতে পারে। হযরত খাদিজাতুল কুবরা রাঃ ছিলেন শ্রেষ্ট ধনী ও শ্রেষ্ট ব্যবসায়ী। সুতরাং ব্যবসা বাণিজ্য নারীদের জন্য পরিত্যাজ্য নয়। ★★★ নারী ও পুরুষের অবাধ মেলা-মেশা পৃথিবীর সমগ্র ইতিহাসে হযরত আদম আঃ থেকে শুরু করে শেষ নবী ছঃ পর্যন্ত কোন যুগেই বৈধ মনে করা হয়নি। কেবল শরীয়ত অনুসারীরাই নয়, পৃথিবীর সাধারণ অভিজাত পরিবার সমূহেও এ ধরণের মেলা-মেশার সুযোগ দেয়া হয় না। ★★★ হযরত মুসা আঃ -র কাহিনীতে উল্লেখ করা হয়েছে, তাঁর মাদাইয়ান সফরের সময় দুজন যুবতী তাদের ছাগল পালকে জলপান করানোর জন্য দূরে দাড়িয়েছিল। এর কারণ এটাই বলা হয়েছে যে তারা পুরুষের ভীড়ে প্রবেশ করা পছন্দ করেননি। হযরত যয়নব বিনতে যাহহাশের বিবাহের সময় পর্দার প্রথম আয়াত নাঝিল হয়েছিল। আয়াত নাঝিল হওয়ার পূর্বেও তিরমিজির রেওয়াওতে তাঁর গৃহে বসার অবস্থা সম্পর্কে বলা হয়েছে- "তিনি প্রাচীরের দিকে মুখ করে বসেছিলেন।" ★★★ ইসলামে পর্দার হুকুম অবতরণের পূর্বেও নারী-পুরুষের অবাধ মেলা-মেশা এবং যত্রতত্র সাক্ষাৎ ও কথা-বার্তার প্রচলন অভিজাত ও সাধু লোকদের মধ্যে কোথাও ছিল না। অধুনা যেসব ধর্ষণ ও আবাঞ্ছিত নারী নির্যাতনের কথা পত্র-পত্রিকায় দেখা যায়, তার একামাত্র কারণই হল নারী-পুরুষের অবাধ মেলা-মেশা এবং যত্রতত্র সাক্ষাৎ ও কথা-বার্তার প্রচলন- যা অভিজাত সম্প্রদায়ের বর্তমানে মানানসহী। আরবে মূর্খতার যুগে আইয়্যামে জাহেলিয়াতে নারীদের সাথে প্রকাশ্য চলাফেরা অভিজাত পরিবার সমূহে ছিল না। বরং যাযাবর ও দাসী ধরণের নারীদের মধ্যে ছিল। আরবের সম্ভ্রান্ত পরিবারের লোকেরা একে দুষনীয় মনে করত। আরবের ইতিহাস সাক্ষী, ভারতবর্ষেও হিন্দু, বৌদ্ধ ও অন্যান্য মুশরিক ধর্মাবলম্বীদের মধ্যেও নারী-পুরুষের অবাধ মেলা-মেশা অবৈধ ছিল। পুরুষের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করার দাবি, বাজার ও সড়কে প্যারেড করা, শিক্ষাক্ষেত্র থেকে শুরু করে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে নারী পুরুষের দ্বিধাহীনভাবে মেলা-মেশা ও এক নিমন্তণে, ক্লাবঘরে দেখা-সাক্ষাতের বর্তমান কার্যধারা কেবল ইউরোপিয়ান জাতি সমূহের বেহায়াপনা ও অশ্লীলতার ফসল। প্রাচীনকালে ভারতবর্ষেও এরূপ ছিল না। আল্লাহ তা'য়ালা নারীর দৈহিক গঠন প্রকৃতিকে যেমন পুরুষ থেকে স্বতন্ত্র করে সৃষ্টি করেছেন, তেমনি তার মন মস্তিষ্কেও স্বভাবতঃ লজ্জা নিহিত রেখেছেন, যা তাকে স্বভাবগতভাবে পুরুষ থেকে আলাদা থাকতে ও আবৃত হয়ে চলতে বাধ্য করে। এই স্বভাবসিদ্ধ ও মজ্জাগত লজ্জা-শরম সৃষ্টির শুরু থেকে নারী ও পুরুষের মধ্যে শালীনতার প্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়েছিল। দুর্ভাগ্য হলেও দায়ী সেই শালীনতার অভাব। কিন্তু ইসলামী শরীয়ত একটি সর্বাঙ্গীন ও পূর্ণাঙ্গ ব্যবস্থা বিধায় এতে মানব প্রয়োজন সকল দিকই বিবেচিত হয়েছে। ★★★ কোরআনে পাকের সাতটি আয়ত ও সত্তরটি হাদিছের সারকথা এই যে, শরীয়তের আসল কাম্য ব্যক্তি পর্দা, অর্থাৎ নারীসত্বা ও তাদের গতিবিধি পুরুষের দৃষ্টি থেকে গোপন রাখা। এটা গৃহের চার প্রাচীর অথবা তাঁবু ও ঝুলন্ত পর্দার মাধ্যমে হতে পারে। কিন্তু নারীদেরকে গৃহ থেকে বের হওয়ার প্রয়োজন দেখা দেওয়া আবশ্যম্ভাবী। এরজন্য কোরআন ও সুন্নাহর দৃষ্টে এরূপ মনে হয় যে নারীরা আপাদমস্তক বোরখা বা চাদরে আবৃত হয়ে বের হতে হবে। পথ দেখার জন্য চাদরের ভিতর থেকে চক্ষু খোলা রাখবে অথবা বোরখার সামনে সামনে জালি রাখবে। ফ্রেন্সের রাজধানী গেরিশে বর্তমানে বোরখার মুখের 'বেকান' নিষিদ্ধ। অথচ আমরা জানি যে, কোন দেশের সংবিধান কোন ধর্ম-কর্মের উপর হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। যাক, এসব ফ্রান্স এবং চীনের আভ্যন্তরীণ ব্যাপার। আমরা কেবল ইসলামের দৃষ্টিতে নারী- এ পর্যায়েই আলোচনা এগিয়ে নেব। ★★★ পর্দা সম্পর্কে প্রথম আয়াত হযরত জয়নব রাঃ -র বিবাহের সময় অবতীর্ণ হয়েছে। হযরত আনাস রাঃ বলেন, "আমি তখন রাসুলুল্লাহ ছঃ -র নিকট উপস্থিত ছিলাম। ফরে পর্দার এই ঘটনা সম্বন্ধে আমি বেশ জ্ঞাত আছি। আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পর রাসূলুল্লাহ ছঃ পুরুষের সামনে একটি চাদর টাঙ্গিয়ে হজরত জয়নব রাঃ -কে তার ভেতরে আবৃত করে দেন, বোরখা অথবা চাদরে আবৃত করেননি। ★★★ সহি বোখারীতে হযরত আয়েশা রাঃ -র রেওয়ায়েতে মোতা'যুদ্ধ অধ্যায়ে বর্ণিত হয়েছে যে, হযরত যায়েদ ইবনে হারেসা, জাফর এবং আব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াহাব্ রাঃ শাহাদতের সংবাদে মসজিদে নববীতে যখন রাসূলুল্লাহ ছঃ -র চোখে-মূখে তীব্র দুঃখ ও কষ্টের চিহ্ন পরিস্ফুট ছিল; হযরত আয়েশা রাঃ বলেন, "আমি গৃহের ভেতর থেকে দরজার এক ছিদ্র দিয়ে এই দৃশ্য অবলোকন করেছিলাম। এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, হযরত আয়েশা রাঃ এই বিপত্তির সময়ও বোরখা পরিধান করত বাইরে এসে সমাবেশে যোগদান করেননি। ★★★ "বোখারী কিতাবুল মাগাযী", "ওমরাতুল ক্বাযা" অধ্যায়ে হযরত আয়েশা রাঃ ভগ্নিপুত্র ওরয়া ইবনে যুবায়ের ও আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাঃ সম্পর্কে বর্ণিত আছে যে, তাঁরা মসজিদে নববীতে হযরত আয়েশা রাঃ -র কক্ষের বাইরে নিকটবর্তী স্থানে উপস্তিত ছিলেন এবং রাসুলুল্লাহ ছঃ -র উমরাহ সম্বন্ধে আলোচনা করছিলেন। ইবনে ওমর বলেন, "ইতিমধ্যে আমরা হযরত আয়েশা রাঃ -র মেসওয়াক করার ও গোনাহ মাফ করার আওয়াজ ভেতর থেকে শুনতে পেলাম। এ রেওয়ায়েত থেকেও জানা যায় যে, পর্দার আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পর নবী পত্নীগণ গৃহ থেকে পর্দা করার নীতি অবলম্বন করেছিলেন। ★★★ অনুরূপভাবে বুখারীর তায়েফ যুদ্ধ অধ্যায়ে বর্ণিত আছে যে, রাসুলুল্লাহ ছঃ জলের একটি পাত্রে কুল্লি করে তা আবু মুসা আশআরী ও বিলাল রাঃ -কে পান করতে দিয়েছিলেন এবং তাঁরা যেন এই জল তাঁদের মুখমণ্ডলেও লাগায়। উম্মুল মু'মিনিন হযরত উম্মে সালমা রাঃ পর্দার আড়াল থেকে এ দৃশ্য দেখছিলেন। তিনি ভেবর থেকে আওয়াজ দিয়ে ছাহাবীদ্বয়কে বললেন- "এই তাবারুকের কিছু অংশ তোমাদের জননীর জন্যও রেখে দিও।" অর্থাৎ তাঁর জন্য। ★★★ এ হাদিছ থেকে প্রণিধানযোগ্য বিষয়টি হল এই যে, নবী পত্নীগণও অন্যান্য মুসলমানের ন্যায় রাসুলুল্লাহ ছঃ -র তাবারুকের জন্য আগ্রহান্বিত ছিলেন। এটাও রাসূলুল্লাহ ছঃ -র পবিত্র সত্ত্বার বৈশিষ্ট্য ছিল, নতুবা স্ত্রীর সাথে স্বামীর যে অবাধ সম্পর্ক থাকে তার পরিপ্রেক্ষিতে নবী পত্নী রাঃ -র স্বামীর প্রতি এ ধরণের সম্মান ও ভক্তি প্রকাশ স্বভাবতই অসম্ভব। ★★★ বুখারী কিতাবুল আদাবে হযরত আনাস রাঃ থেকে বর্ণিত আছে যে, একবার তিনি ও আবু তালহা রাঃ রাসূলুল্লাহ ছঃ -র সাথে কোথাও গমনরত ছিলেন। রাসূলুল্লাহ ছঃ উটে সওয়ার ছিলেন ও সঙ্গে ছিলেন উম্মুল মু'মিনিন হযরত সাফিয়া রাঃ। পথিমধ্যে হঠাৎ উট হুচট খেলে তাঁরা উভয়েই মাটিতে পড়ে গেলেন। আবু তালহা রাঃ তাঁরা উভয়েই মাটিতে পড়ে গেলেন। আবু তালহা রাঃ রাসূলুল্লাহ ছঃ -র কাছে গিয়ে বললেন- "আমার জীবন আপনার জন্য উৎসর্গ হোক, আপনি কোন আঘাত পাননি তো? তিনি বললেন- না। তুমি সাফিয়া রাঃ -র খবর নাও। আবু তালহা রাঃ প্রথমে বস্ত্রদ্বারা নিজের মুখমণ্ডল আচ্ছাদন করে হযরত সাফিয়া রাঃ -র কাছে পৌঁছে তাঁর উপর কাপড় রেখেছিলেন। আম্মাজান উঠে দাঁড়ালেন এবং আবু তালহা রাঃ পর্দারত অবস্থায় তাঁকে উঠে সওয়ার করিয়ে দিলেন। এই হল উম্মুল মু'মিনিনদের সাথে ছাহাবীদের ব্যবহার। মাতৃসম উম্মুল মু'মিনিনদের বেলায়ও ছাহাবাগণ পর্দা ব্যাপারে সতর্ক থাকতেন। ★★★ তিরমিজী শরীফে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসুদ রাঃ বাচনিক রেওয়ায়েতে রাসূলুল্লাহ ছঃ বলেন- "নারী যখন গৃহ থেকে বের হয়, তখন শয়তান তাকে তাক করে (অর্থাৎ তাকে অনিষ্ট সাধনের উপায় হিসেবে গ্রহণ করে)।" ইবনে খোজাইমা ও ইবনে হাব্বান এ হাদিছে আরও বর্ণনা করেন- "নারী তার পালনকর্তার সর্বাধিক নিকটে তখন থাকে, যখন সে তার গৃহের অভ্যন্তরে অবস্থান করে।" এ হাদিছেও সাক্ষ্য দেয় যে, গৃহে অবস্থান করা ও বাইরে না যাওয়াই নারীদের আসল কাজ। ★★★ অন্য এক হাদিছে রাসূলুল্লাহ ছঃ বরেন- নিরুপায় হওয়া ছাড়া নারীদের বাইরে যাওয়ার বৈধতা নেই।" হযরত আলী রাঃ বর্ণনা করেন, আমি একদিন রাসূলুল্লাহ ছঃ -র কাছে উপস্থিত ছিলাম, তখন তিনি ছাহাবায় কেরামদেরকে প্রশ্ন করলেন, "নারীদের জন্য উত্তম কী?" ছাহাবায় কেরামগণ চুপ রইলেন। কোন জওয়াব দিলেন না। অতঃপর আমি গৃহে পৌছে ফাতিমা রাঃ -কে এই প্রশ্ন করলে তিনি বললেন,- "নারীদের জন্যে উত্তম এই যে, তারা পুরুষদের দেখবে না এবং পুরুষরাও তাদেরকে দেখবে না।" আমি তার এই জওয়াব রাসূলুল্লাহ ছঃ -র কর্ণগোচর করালে তিনি বললেন- "সে সত্য বলেছে। সে তো আমারই অংশ বিশেষ। ★★★ নবী পত্নীগণ শুধু বোরখা বা চাদরই ব্যবহার করতেন না বরং তাঁরা সফরে হাওদায় থাকতেন। হাওদায় উপবিষ্ট অবস্থায় তা উঠের পিঠে তুলে দেওয়া হত এবং এমনিভাবে নামানোও হত। আরোহীর জন্য হাওদা গৃহের ন্যায় থাকে। হাওদায় অবস্থানই হযরত আয়েশা রাঃ জঙ্গলে থেকে যাওয়ার কারণ হয়েছিল। কাফেলা রওয়ানা দেওয়ার সময় হযরত আয়েশা রাঃ হাওদায় আছেন, এই মনে করে খাদিমরা হাওদাটি উটের পিঠে তুলে দেয়। বাস্তবে তিনি তাতে ছিলেন না, বরং প্রয়োজনে বাইরে গিয়েছিলেন। এই ভুল বুঝাবুঝির জন্য কাফেলা রওয়ানা হয়ে যায় এবং উম্মুল মু'মিনিন হযরত আয়শা রাঃ রাস্তায় একাকিনী থেকে যান। ★★★ এ বিষয়টিও শক্তিশালী সাক্ষী যে, রাসূলুল্লাহ ছঃ এবং তাঁর পত্নীগণ পর্দার অর্থ এটাই বুঝিয়েছিলেন যে, নারীরা গৃহের অভ্যন্তরে থাকবে এবং সফরে গেলে হাওদার অভ্যন্তরে থাকবে। ★★★ প্রয়োজনের ক্ষেত্রে নারীরা গৃহ থেকে বের হলে বোরখা অথবা লম্বা চাদর দ্বারা আপাদমস্তক আবৃত করে বের হওয়ার বিধান আছে। এর প্রমাণে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ পাক বলেন- "হে নবী! আপনি আপনার পত্নিগণকে, কন্যাগণকে এবং মুসলমানদের স্ত্রীদেরকে বলুন- তারা যেন 'জিলবাব' ব্যবহার করে।" 'জিলবাব' সেই লম্বা চাদরকে বলা হয় যদ্বারা নারীর আপাদমস্তক আবৃত হয়ে যায়। 'সতর' আবৃত করা সর্বাবস্থায়, নির্জনে ও প্রকাশ্যে ফরয এবং পর্দা কেবল বেগানা পুরুষের উপস্থিতিতে ফরয। এই বিবরণ লিপিবদ্ধ করার কারণ এই যে, উভয় বিষয়কে মিশ্রিত করে দেওয়ার কারণে কোরআনের বিধানাবলী বোঝার ক্ষেত্রে অনেক সন্দেহ দেখা দেয়। নারীর মুখমণ্ডল ও হাতের তালু সকলের মতেই "সতর" বহির্ভুত"। তাই নামাঝে এগুলো খোলা থাকলে সকলের মতেই নামাঝ জায়েঝ। কতিপয় ফেকাহবিদহণ ক্বিয়াসের মাধ্যমে পদযুগলকেও এগুলোর অন্তর্বুক্ত করেছেন। ★★★ ইমাম চারজনের মধ্যে ইমাম শাফেয়ী, মালিক এবং আহমদ ইবনে হাম্বল- মুখমণ্ডল এবং হাতের তালু খোলা রাখার কোন অবস্থাতেই অনুমতি দেননি; অনর্থের আশংকা হোক বা না হোক। ইমাম আজম আবু হানিফা রঃ অনর্থের আশংকা না থাকার শর্তে মুখমণ্ডল ও হাতের তালু খোলা রাখার পক্ষে মত দিয়েছেন। সম্ভবত শর্তটি অনুপস্থিত বিধায় হানফী ফেকাহবিদগণ বেগানা পুরুষের সামনে মুখমণ্ডল ও হাতের তালু খোলার অনুমতি দেননি। হাদিছে আছে, "একবার হযরত ফজলকে জনৈকা নারীর প্রতি তাকিয়ে থাকতে দেখে রাসূলুল্লাহ ছঃ স্বহস্থে তার মূখ মণ্ডল অন্য দিকে ফিরিয়ে দিলেন।" সুতরাং বর্তমান অনর্থের যুগে কে এইসব আশংকা থেকে মুক্ত? এসব চিন্তাধারা নিয়ে বলা হয়েছে- আমাদের যুগে সর্বাবস্থায় বেগানা নারীর দিকে দৃষ্টিপাত করা নিষিদ্ধ। তবে কোন পর্যায়ে দৃষ্টিপাত করা যায় তা ভিন্ন কথা। যেমন, বিচারক অথবা সাক্ষি, যারা কোন ব্যাপারে নারী সম্পর্কে সাক্ষ্য অথবা ফায়সালা দিতে বাধ্য হয় অথবা কোন ডাক্তার নারী রোগীর চিকিৎসা না করলে নয়। ★★★ কিন্তু ইমাম আবু হানিফা রঃ নারীর মুখমণ্ডল ও হাতের তালু খোলাকে অনর্থের স্থলাভিষিক্ত করেননি। বরং বিধান এর উপর নির্ভরশীল রেখেছেন যে, যে ক্ষেত্রে নারীর নিকটবর্তী হওয়ার প্রবণতার আশংকা অথবা সম্ভাবনা থাকবে, সেখানে নারীর প্রতি দৃষ্টিপাত করা নিষিদ্ধ হবে; এবং যেখানে এরূপ সম্ভাবনা নেই, সেখানে জায়েঝ হবে। কিন্তু পূর্বেই বলা হয়েছে- বর্তমান যুগে এরূপ সম্ভাবনা না থাকা বিরল। ★★★ সারকথা এই দাঁড়াল যে ইমাম চারজনের ঐক্যমতে বোরখা ও চাদর দ্বারা সমগ্র দেহ আবৃত করে কেবল মুখমণ্ডল ও হাতের তালু খোলা রেখে বেগানা পুরুষের সামনে আসা নিষিদ্ধ হয়ে গেছে। ফলে বর্তমানে পর্দার কেবল প্রথমোক্ত স্তরই অবশিষ্ট আছে, (এক) নারীদের গৃহের অভ্যন্তরে থাকা। বিনা প্রয়োজনে বাইরে বের না হওয়া। (দুই) বোরখা ইত্যাদি পরিধান করে বের হওয়া প্রয়োজনের সময়ে এবং প্রয়োজন পরিমাণে। ★★★ এর দ্বারা একথা যেন কেউ মনে না করেন যে তবে আর নারীর স্বাধীনতা রইলো কোথায়? রইল বৈ কি? উচ্ছ্বংখলতা বা বাড়াবাড়ি দমন করলেই যে স্বাধীনতা লোপ পায় তা না। মুসলিম নারী অবাধে মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়তে পারে, ঈদ উৎসবে যোগ দিতে পারে, হজ্জে যেতে পারে, রাজকার্য পরিচালনা করতে পারে, ব্যবসা-বাণিজ্য ও ক্রয়-বিক্রয় করতে পারে, জ্ঞানচর্চা করতে পারে। অন্যান্য ক্ষেত্রে স্বাধীনভাবে সে বহু কাজ করতে পারে। সর্বক্ষেত্রেই নারীর অধিকার রয়েছে। ইসলামের ইতিহাসই তার প্রমাণ। বলাবাহুল্য, এ বিধান খুবই সঙ্গত হয়েছে। কারণ পুরুষ নারী অপেক্ষা বলিষ্ট ও শক্তিমান; অথচ কঠোর জীবন সংগ্রামের জন্য নারী উপযোগী। হজরত খাদিজাতুল কুবরা রাঃ তার জ্বলন্ত প্রমাণ। নারী দয়া-মায়া, স্নেহমমতা ও প্রীতিপ্রেমের জীবন্ত মূর্তী। এজন্যই উভয়ের কর্মক্ষেত্র বিভিন্ন। প্রত্যেকের কার্যই মহৎ এবং অপরিহার্য। সৃষ্টির মূলেই দেখতে পাওয়া যায় দু'টি শক্তি; সংরক্ষণ ও প্রতিপালন (Protection and Preservation); সংরক্ষণ কার্য পুরুষের, আর প্রতপালনের কার্য নারীর। সৃষ্টির রক্ষনাবেক্ষণের জন্য প্রথমেই নংরক্ষনের প্রয়োজন। তাই নারী হিসেবে যে পুরুষের অধীন তা অবশ্য স্বীকার্য। অন্যান্য কতকগুলো স্বাভাবিক প্রতিবন্ধকতাও নারীকে পুরুষ থেকে এক ধাপ নিচে নামিয়ে রেখেছে। ★★★ মহান আল্লাহ ও রাসূল ছঃ -র এসব বিধান নারী জাতিকে, ও তাদের মর্যাদাকে কতদূর বাড়িয়ে দিয়েছে, তা আর বলে বুঝাবার অপেক্ষা রাখে না। মুসলিম নারীর সাথে একজন অমুসলিম নারীর তুলনামূলক সমালোচনা করলেই তা অনায়াসে বুঝে আসে। এই প্রগতির যুগেও অন্য নারীর সংখ্যা দেখলেই তা বুঝা যাবে। অথচ আশ্চর্যের বিষয়, আদর্শ মুসলিম সমাজে ঐ শ্রেণির নারী নেই বললেই চলে। এর কারণ এই যে, মুসলিম সমাজে এরূপ জঘন্য পরিস্থিতি ঘটবার কোন অবকাশ নেই। মুসলমান পুরুষ কোন নারীর উপর যত অত্যাচার করুক না কেন, নারীকে কখনও গৃহ বা সমাজ ত্যাগ করে চলে যেতে হয় না। আপন পায়েই সে দাঁড়িয়ে থাকার ক্ষমতা তার মোহরানা ইত্যাদি তাকে দিয়েছে। তাছাড়া বিবাহ ক্ষেত্রে আগে নারীর স্বীকৃত নেওয়া হয়, নারী কোন পুরুষকে স্বামী হিসেবে বরণ করতে চায়, তবে পরে পুরুষের স্বীকৃত নিতে হয়। তাইত ইসলামের শিক্ষার গুণে কোন পুরুষ কোন নারীকে সমাজ থেকে বজিষ্কার করে দিবার মতো নির্মম হতে পারে না, কারণ সে কোরআনের বিধানকে ভয় করে। নারীর প্রতি শ্রদ্ধা তার মজ্জাগত ব্যাপার। এমনকি নারী হরণের মতো এত জগন্য পাপকার্য্যের মধ্যেও ইসলাম পথভ্রষ্টদিগকে পূণ্য ও কল্যাণের দিকে আহ্বান করে। ★★★ "বেহেশত্ জননীর চরণতলে অবস্থিত"- এ অমর বাণী হযরত মুহাম্মদ ছঃ -র। মাতৃজাতীর প্রতি শ্রদ্ধা- এ অপেক্ষা আরও অধিক দূর অগ্রসর হতে পারে কি? মাতা-পিতাকে সেবা করার সুযোগ এ মহাপুরুষের জোটেনি। তবুও মৃত জননী আমিনা এবং দুধ-মা হালিমার (রা) প্রতি তিনি যে ব্যবহার দেখিয়ে গেছেন, তা-ই আমাদের পক্ষে যথেষ্ট। পরিণত বয়েসে একবার হযরত রাসূলুল্লাহ ছঃ -র মা আমিনার সমাধি ক্ষেত্রে উপস্থিত হয়ে তাঁর কবর জিয়ারত করেছিলেন এবং নীরবে অশ্রু বর্ষণ করেছিলেন। দুধ-মা হালিমার প্রতিও তাঁর শ্রদ্ধা ছিল অপরিসীম। একবার হালিমা মদিনায় হযরত ছঃ -র সাথে সাক্ষাত করতে এসেছিলেন। হযরত রাসূলুল্লাহ ছঃ সভাসদবৃন্দের মধ্যে বসেছিলেন। বিবি হালিমাকে দেখতে পেয়ে তিনি সম্ভ্রমে উঠে দাঁড়ান এবং সকলের নিকট পরিচয় দেন- "ইনি আমার মা"। হযরত হালিমা রাঃ -কে বসার জন্য নবী পাক ছঃ নিজের শিরোস্ত্রাণ বিছিয়ে দেন। হালিমা যতদিন বেঁচেছিলেন, ততদিন তিনি তাঁকে নানাভাবে সাহায্য করেছিলেন। হোনায়েনের যুদ্ধে তাঁর দুধ-বোন হযরত শায়েমা বন্দীনী হলে তাঁর খাতিরে ৬০০০ জন বন্দীকে বিনাপণে মুক্তি দান করেছিলেন। ★★★ এই হল ইসলামের শিক্ষা। নারী জাতি মাতৃস্থানীয়, নারী জাতি মুক্ত। বিবাহের পর পৈত্রিক সম্পত্তিতে নারী জাতির অধিকার দিয়েছে ইসলাম। বিবাহকালীন স্বামীর দেনমোহর মুসলিম নারীর সম্ভ্রমের আরও একটি দৃষ্টান্ত। ইসলামে শুধু যে পুরুষই নারীকে তালাক দিতে পারে তা নয়; স্ত্রীও প্রয়োজন হলে বিধিমতে বিবাহ-বন্ধন ছিন্ন করাতে পারে। নারী জাতির অধিকার এও এক চূড়ান্ত দৃষ্টান্ত, সন্দেহ নেই। ★★★ ইসলাম দেখিয়ে দিয়েছে, মানব জাতির পতনের জন্য নারী দায়ী নয়। ইসলাম নারী জাতিকে এ অপবাদ থেকে রক্ষা করেছে। নারীকে সে দিয়েছে এক মহিমাময়ী রূপ। সুখ-দুঃখ, সুদিন-দুর্দিনে নারী যে পুরুষের চির সঙ্গিনী, এই আদর্শই আমরা দেখতে পাই বিবি হাওয়ার মধ্যে। আদর্শ স্বামী-স্ত্রীর ন্যায়ই তাঁরা ধরাধরি করে বেহেশত থেকে বিদায় নিয়েছিলেন। এখানে ইসলাম যে নারী-পুরুষের দাম্পত্য জীবনের মোহনীয় চিত্র এঁকে দিয়েছে, তার তুলনা নেই। ★★★ ইসলামে নারী জন্মের যে ইতিহাস আছে, তা থেকেও দেখা যায় নারী-পুরুষের মূলত কোন পার্থক্য নেই। একই উদপাদন দ্বারা আল্লাহ পাক উভয়কেই সৃষ্টি করেছেন। স্বামীর সম্পত্তিতে নারীর যে কতখানি অধিকার আছে, সে কথাও এখানে স্মরণীয়। এ সম্বন্ধে ইসলাম নারীকে যে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছে, আজ পর্যন্ত অন্য ধর্ম তা করতে পারেনি। একই উপাদান দ্বারা আল্লাহ পাক উভয়কেই সৃষ্টি করেছেন। স্বামীর সম্পত্তিতে নারীর যে কতখানি অধিকার আছে, সেকথাও এখানে স্মরণীয়। এ সম্বন্ধে ইসলাম নারীকে যে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছে, আজ পর্যন্ত অন্য কোন ধর্ম তা করতে পারেনি। ★★★★★★★★★★★★★★★★