Jump to content

User:Arshad Ali77

From Wikipedia, the free encyclopedia

হযরত বখতিয়ার ফাকির (রহ.) প্রতিষ্ঠাতা

বখতিয়ার ফকির (রহ) জামে মসজিদ
বখতিয়ার ফকির (রহ) জামে মসজিদ পুরাতন ছবি ( ১৯৮৬)

অন্যতম এক মহা সংস্কারক সম্রাট বখতিয়ার ফকির (রহঃ)

বখতিয়ারের পরিচয়ঃ  ১৫২৬খ্রি: প্রথম পানি পথের যুদ্ধে ইব্রাহিম লোদীকে পরাজিত করে দিল্লীর সিংহাসন দখল করলেও চট্টগ্রাম দখল করতে পারেনি। চট্টগ্রাম দখল করতে আরোা ১৪০ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছিল। চট্টগ্রাম ছিল আরকানি মগদের দখলে । ১৫২৫ খ্র্রিব্দেঃ গৌড়ের সুলতান নশরত শাহ উত্তর চট্টগ্রাম সহ দক্ষিনের শঙ্খ নদীর তীর পর্যন্ত আরাকানী মগ রাজার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে বিজয় লাভ করেন। ঐ মগ রাজার বাড়ি বর্তমানে রাজবাইজ্যা বাজার নামে খ্যাত। ১৬৬৬ খ্রি: ২৭শে জানুয়ারী নবাব শায়েস্তা খার পুত্র বুজুর্গ উমেদ খানের নেতৃত্বে আরকানিদের বিরুদ্ধে জল ও স্থলপথে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে মগদের পরাভূত করে চট্টগ্রাম দখল করেন।

বখতিয়ারের মূল নাম। মুহাম্মদ বখতিয়ার তার পিতা-মাতার নাম জানা যায়নি। তার দুই ভাইয়ের মধ্যে মুহাম্মদ ইয়াসিন ও মুহাম্মদ হানিফ তিনি কখন ইসলাম প্রচারের জন্য আসেন সঠিক ভাবে কোন তথ্য পাওয়া না গেলেও অষ্টদশ বা নবম শতকে অনেক পীর বুজর্গ দরবেশ, অলি বাংলাদেশ তথা তৎকালীন উপমহাদেশে আগমন করেন ইসলাম প্রচার করতে। আবার অনেক বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে এখানে এসে স্থায়ী হন। আরব, ইয়ামেন,  ইরানসহ বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এই ধর্মীয় প্রচারকরা আসতে থাকেন। চট্টগ্রামে অনেকে এসেছেন, তার মধ্যে ১৬শতকের দিকে বখতিয়ার ফকির (রহঃ) অন্যতম। তিনি তার দুই ভাই ইয়াসিন ও হানিফকে নিয়ে এই এলাকায় বসতি স্থাপন করেন। কালক্রমেই বখতিয়ারের নামে বাড়ির নাম করন করা হয় ।

উপাধীঃ বখতিয়ার ফকির, ফকির আরবী শব্দ, সংসার ত্যাগী আল্লাহর নৈকট্য লাভের পাগলকে ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় ফকির বলে। দুনিয়াতে যাদের সম্বল বলতে কিছু থাকেনা, যারা আল্লাহ ও নবীকে পাওয়ার জন্য ধরনীর মায়া ত্যাগ করে বা অলৌকিক ক্ষমতা এবং শক্তির অধিকারী তাদেরকে ফকির বলা হয়।

বখতেয়ারের জনহিতকর কার্যাবলী;

বখতেয়ার উদার মনের শাসক হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন । তিনি সমাজ সংস্কারে অনেক ভমিকা পালন করেন। এই জন্য তিনি গৌরবের উচ্চ শিখরে সমাশিন হন। তার শাসনব্যস্থা ইসলামী ধর্মনীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত ছিল। তিনি জনকল্যাণ ও প্রজাতৈষণকে তার শাসন নীতির প্রধান লক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করেন। বখতেয়ার ইসলাম প্রচারের জন্য সতেরশ শতকের মাঝামাঝিতে একটি মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন কালক্রমে তার নামে মসজিদের নাম করণ করা হয়। তার সংস্কারের মধ্যে উল্লেখ যোগ্য হলো নাছির উদ্দিন শাহ, রিয়াজ উদ্দিন শাহ এবং দরগাহ টিলা নামে তিনটি কবরস্থান প্রতিষ্ঠা করেন। সমাজের নিত্য প্রয়োজনীয় ব্যবহারের জন্য (১৯১৭খ্রিব্দেঃ) বড় পুকুর নামে একটি পুকুর খনন করেন।

মানবতা ও মহত্তঃ  তিনি নিজের কথা না ভেবে অর্থাৎ আত্মচিন্তায় নিমগ্ন না থেকে পরের মঙ্গলের জন্য বা দেশ ও দশের হিতার্থে  আতেœাৎসর্গ করেন,এবং হীনতা,দীনতা ,সংকীর্নতা, সার্থপরতা, পরশ্রীকাতরতা ইত্যাদি দোষ থেকে নিজেকে সব সময় হেফাজত রাখেন ,সকল মানুষের মঙ্গলচিন্তা করেন এবং কাজের মধ্য দিয়ে মঙ্গল ও কল্যাণ স্বাধন করেন। সমাজের জ্ঞানী গুণী মানুষের সাথে সাক্ষাথ করে সমাজের বিভিন্ন পরিকল্পনা মূলক উদ্যোগ গ্রহণ করতেন। মহৎ মানুষের চিন্তাকর্ম সবসময় সমাজকেন্দ্রীক ও দেশকেন্দ্রীক। তিনি সর্বদা দেশ,জাতি, ও অবহেলিত সমাজ, ধর্ম আক্বিদা নিয়ে চিন্তা ভাবনা করতেন কি ভাবে দেশের মঙ্গল হবে..? কি ভাবে দেশের মানুষের কল্যান সাধিত হবে? সে সম্পর্কে নিজেকে সারাক্ষণ ব্যস্ত রাখতেন, তিনি কখনো নিজের কথা ভাবেন নি নিজের ভালো মন্দের দিকে লক্ষ্য রাখেননি । বখতিয়ার ছিলেন  আলোকিত অন্তরের অধিকারী এক প্রতিভাসম্পন্ন সম্রাট । মানবতা বা মানব প্রেম যার হৃদয়ে মানব প্রেমের শিক্ষা প্রজ্বলিত হয় সেই মহত্তের পথে পা বাড়ায়। যার প্রমাণ হিসেবে বলা যায়, । বখতিয়ার কথা না বললে নই। মানব প্রেমিক মানুষ সদাসর্বদা সামাজিক ভাবে মানুষের কথা ভাবেন এবং মানুষের কিসে কল্যাণ বা মঙ্গল হবে সেই চিন্তাই থাকেন। তিনি নিজের কথা ভাবেন না, হীন স্বার্থপরতা তাকে কখনো কোনো ভাবে স্পর্শ করতে পারেনি, তিনি নিজেকে পরের মাঝে বিলিয়ে দিয়েছেন এবং আপন পরের ভেদাভেদ ভুলে যান।তিনি পরের সেবা করে পরমাত্মার সাযুজ্যলাভে ব্রতী হন। এভাবে জীবন সাধনায় আত্মোৎসর্গ করে তিনি মহত্তে¦র মহিমায় মহীয়ান হয়ে উঠেন চট্রগ্রামের হাটহাজারী, ফতেপুর এলাকার মানুষের জীবনে মহত্তে¡ও জ্বলন্ত বিগ্রহ সকল শ্রেণী পেশার মানুষকে মহত্তের পথে আহব্বান জানাই এবং সকলের  অনুকরণীয় হয়ে বিরাজমান থাকেন। তাই বলি এক মনীষীর ভাষায়

‘‘যে দিন তুমি এসেছিলে ভবে

কেঁদেছিলে তুমি হেঁসেছিলো সবে

এমন জীবন তুমি করিবে গঠন

মরিয়া হাঁসিবে তুমি কাঁদিবে ভুবণ’’

বিশিষ্ট দানবীর বখতিয়ার চট্টগ্রাম কোর্টের সম্রাট হিসেবে অধিক পরিচিত ছিলো, তিনি দারিদ্র বিমোচনের জন্য যাকাত আদায় করতেন, চট্টগ্রামে যাওয়া আসার জন্য বাহন হিসেবে ঘোড়া ব্যবহার করতেন বলেও অনেক মুরব্বী সমাজের কাছে স্পষ্ট পাওয়া যায়।

বিচারব্যবস্থা : বখতিয়ার  স্বৈরাচারী শাসনব্যস্থা মূলত ন্যায়নীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত ছিল। সাধারণ মানুষের ওপর অন্যায় বা অবিচারের ব্যাপারে তিনি অত্যন্ত সচেতন থাকতেন। প্রাচিন আমলে তাঁর ন্যায়বিচারের জন্য খ্যাতি লাভ করেন।

বখতিয়ার ফকির বাড়ির অবস্থানঃ

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নাম্বার রোডে রেল গেইট অতিক্রম করে ক্ষনিক টা পশ্চিমে উত্তর পাশে অবস্থিত সবুজে আচ্ছাদিত বখতেয়ার ফকির বাড়ি, যার পশ্চিমে রয়েছে হযরত আলী আহমদ শাহ মাজার, নাসির উদ্দিন শাহ ও রিয়াজ উদ্দিন শাহ টিলা কবরস্থান, দক্ষিণ পশ্চিম কোনে রয়েছে দরগাহ টিলা কবরস্থান, উত্তর সীমান্তে রয়েছে মদনার ঢালার রোড এবং পূর্বে রয়েছে রেল লাইন সড়ক। ভৌগলিক অবস্থানে এমন একটি জাগায় রয়েছে যেন মনে হয় একটি নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি। পশ্চিমে চবির পাহাড় এই সৌন্দর্যকে আরো বহু গুনে বৃদ্ধি করেছে। আর পাশের চবির রোড় টি সবুজের সমারোহ করে সৃষ্ঠি করেছে অনন্য একটি দৃশ্য। পাড়ার টিক মাঝকানে রয়েছে পুকুর ও মসজিদ। মদনার ঢালার রোডের ওপাশে পশ্চিম পাড়া ও সহয্য পাড়া আর রেল লাইনের পূর্ব পাশে কারিগর পাড়া, অন্য দিকে চবি রোডের দক্ষিণ পাশেই রুদ্র পল্লী তথা হিন্দু পাড়া।

নামকরন: প্রতিটি জনপদ, জায়গা, জেলার নামকরনের রয়েছে একটি ঐতিহ্য ও ইতিহাস কিংবা ঐতিহাসিক বর্ণনা। আমাদের বাড়িও এর ব্যাতিক্রম নয়। বখতেয়ার ফকির শব্দের সাথেই এই বাড়ির নাম রাখা হয় বখতিয়ার ফকির বাড়ি। আরব, ইরান, ইয়ামেন সহ বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এই ধর্মীয় প্রচারকরা বাংলাদেশে এসেছেন। চট্টগ্রামেও এরকম অনেকেই এসেছেন, তম্মধ্যে স¤্রাট বখতেয়ার ফকির অন্যতম। তিনি ও তার অপর ২ ভাই হানিফ ও ইয়াসিনকে নিয়ে এই এলাকায় বসতি স্থাপন করেন। তিন ভাইয়ের মধ্যে স¤্রাট বখতিয়ার বড় হওয়ায় উনার নামেই কাল ক্রমে উনাদের বাস-স্থান বখতেয়ার ফকির বাড়ি হিসাবে পরিচিতি পাই। উনারা ঠিক কত সনে এসেছিলেন সঠিক তথ্য পাওয়া না গেলেও বিভিন্ন গোস্টির বায়োজস্ট ও তাদের পুর্ব পুরুষদের বয়স হিসাব করে এটি অনুমান করা হয় যে চতুর্দশ বা ৬ষ্টদশ শতাব্দির মাঝামাঝিতে তারা আসেন। তৎসময়ে এলাকাটি বোদ্ধরা শ্বাসন করত।

বখতিয়ার ফকির বাড়ি (অপর নাম দাঈ পাড়া)

দাঈ পাড়া কেনো বলে? আমাদের বখতিয়ার ফকির বাড়িকে অনেকে ব্যঙ্গ করে দাঈ পাড়া বলে, ধন্যবাদ আপনাদেরকে, জেনে নিন সেই দাঈ পাড়া বলার কারণ। শব্দের অপব্যখ্যা করলে গোনাগার হওয়ার সম্ভাবনা।

দাওয়াত (দা'ওয়াহ নামেও পরিচিত; আরবি: ﺩﻋﻮﺓ অর্থ "আমন্ত্রণ") ধর্মপ্রচার বা ইসলামের প্রচার । দাওয়াত এর আক্ষরিক অর্থ হল " একটা সমন জারি করা " বা "একটি আমন্ত্রণের কাজ করা ", একটা ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য হওয়ার কারনে বিভিন্ন অর্থ বোঝায় "ডাকা" বা আহ্বান করা , (যার ক্রিয়ামূল হচ্ছে ﺩﻋﻮ ) । একজন মুসলিম যিনি দাওয়াতের কাজ করেন, একজন ধর্মীয় কর্মী হিসাবে বা স্বেচ্ছাসেবী সাম্প্রদায়ীক প্রচেষ্টা হিসাবে, যেভাবেই হোক তাঁকে বলা হয় একজন দাঈ, ( ﺩﺍﻋﻲ ,বহুবচন দু'য়া  )।

একজন দাঈ হচ্ছেন সেই ব্যক্তি যিনি ইসলামকে বোঝার জন্য আমন্ত্রণ জানান। সংলাপের মাধ্যমে , অনেকটা যেন

ধর্মপ্রচারক (মিশনারী) দের ইসলামিক সমতুল্য, আহ্বান করছেন ইসলামিক জীবনের দৃঢ় বিশ্বাস (ঈমান), প্রার্থনা এবং সৌজন্যের (আদব-কায়দা) প্রতি।

দাঈ কি জিনিস!

দাঈ হল ইসলামের দিকে যারা আহব্বান করেন বা ডাকেন তাদেকে দাঈ বলে চিনি। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজন দাঈ। সাহাবী আযমাঈনগণ দাঈ। কোরআনে আল্লাহ তায়ালা মানুষকে ভালো কাজে আদেশ ও মন্দ কাজের নিষেদ করতে বলেছেন, যারা এই কাজ করেন তারাই দাঈ। দাঈদের আইডল হলেন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর সাহাবী আযমাঈনগন।

বখতিয়ার ফকির ছিলেন সেই সময়ের একাধারে দাঈ বা ইসলাম প্রচারক, সম্রাট, দানবীর, সংস্কারক, বিচারক তার সেই নাম অনুসারে কেউ বখতিয়ার পাড়া, আবার কেউ দাঈ পাড়া বলে চিনতো। বর্তমানে বখতিয়ার ফকির বাড়ি নামে অধিক জনপ্রিয়। লেখক. মো. এরশাদ আলী, (সাংবাদিক ) ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি।

থ্য সূত্র, তারুণ্যের ইতিকথা, বিশেষজ্ঞ ব্যাক্তি এবং প্রবীণ মুরব্বী।