User:মোঃ আবুল বাশার
তাবুক যুদ্ধ রোম সাম্রাজ্যের সথে সংঘর্ষ তখন আরব দেশের উত্তরে ছিলো বিশাল রোম সাম্রাজ্য। মক্কা বিজয়ের আগে থেকেই এই সাম্রাজ্যের সাথে মুসলমানদের সংঘর্ষ শুরু হয়ে গিয়েছিলো। নবী করীম (স) সিরিয়ার সীমান্ত অঞ্চলে বসবাসকারী গোত্রসমূহের নিকট ইসলামের দাওয়াত নিয়ে একটি প্রতিনিধিদল প্রেরণ করেছিলেন। এই গোত্রগুলোর অধিকাংশই ছিলো খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী এবং রোম সাম্রাজ্যের প্রভাবাধীন। এই গোত্রগুলোর অধিকাংশই ছিলো খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী এবং রোম সাম্রাজ্যের প্রভাবাধীন। তারা মুসলিম প্রতিনিধি দলের পনেরো ব্যক্তিকে হত্যা করে ফেললো। শুধু প্রতিনিধি দলের নেতা কা’ব বিন উমর গিফারী প্রাণ নিয়ে ফিলে এলেন। ঐ সময় হযরত (স) বসরার গভর্নর শেরজিলের নামেও ইসলাম গ্রহণের আহবান জানিয়ে এক পয়গাম পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু উক্ত গভর্নরও রোম সাম্রাজ্যের অধীনস্ত বলে হযরত (স)-এর প্রতিনিধি হযরত হারিস বিন আমীরকে হত্যা করলো। এই সব কারণে সিরিয়ার সীমান্ত এলাকাবর্তী মুসলমানদেরকে একেবারে দুর্বল ভেবে কেউ যাতে উত্যক্ত করতে সাহসী না হয়, সে জন্যে হযরত (স) অষ্টম হিজরীর জমাদিউল আউয়াল মাসে তিন হাজার মুসলমানের এক বাহিনী প্রেরণ করলেন। এই বাহিনীর আগমন সংবাদ পেয়েই শেরজিল প্রায় এক লক্ষ সৈন্য নিয়ে মুকাবিলার জন্যে বেরিয়ে পড়লো। কিন্তু মুসলমানরা এ সংবাদ জানতে পেরেও সামনে এগুতে লাগলো। রোম সম্রাট তখন হাম্স নামক স্থানে অবস্থান করছিলো। কিন্তু মুসলমানরা তা সত্ত্বেও যথারীতি অগ্রসর হতে লাগলো। অবশেষে ‘মুতা’ নামক স্থানে এই পদক্ষেপের ফলে বিপুল সংখ্যক রোমক সৈন্যের মুকাবিলায় এই নগণ্য সংখ্যক মুসলিম সৈন্যের নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়াই স্বাভাবিক ছিলো। কিন্তু আল্লাহর ফযলে রোমকদের এতোবড়ো বাহিনীও মুসলমানদের কোনো ক্ষতি করতে পারলো না; বরং তারাই শোচনীয়ভাবে পরাজিত হলো। এই ঘটনায় আশপাশের সমগ্র গোত্রের ওপর মুসলমানদের মোটামুটি আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হলো। এর ফলে দূর-দূরান্ত এলাকার গোত্রসমূহ পর্যন্ত ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হলো এবং হাজার হাজার লোক ইসলাম গ্রহণ করলো। এর মধ্যে সবচেয়ে আলোড়ন সৃষ্টিকারী ঘটনা হলো এই যে, ফারওয়া বিন আমর আল -জাজামী নামক রোমক বাহিনীর একজন অধিনায়ক ইসলামের শিক্ষায় আকৃষ্ট হয়ে মুসলমান হয়েছিলেন। এই ব্যক্তি তাঁর ঈমানদারীর কি বিরাট প্রমাণ দিয়েছিলেন, তাও লক্ষ্য করবার মতো। তাঁকে বন্দী করে দরবারে এনে রোম সম্রাট কাইসার বললো : ‘ইসলাম ত্যাগ করে আপন পদে পুনর্বহাল হও, নতুব মৃত্যুর জন্যে প্রস্তুত হয়ে যাও।’ জবাবে তিনি পদমর্যাদার ওপর পদাঘাত হেনে বললেন : ‘আখিরতের সাফল্যের বিনিময়ে দুনিয়ার নেতৃত্ব গ্রহণ করতে আমি প্রস্তুত নই।’ অবশেষে তাঁকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হলো। এই ঘটনার ফলে হাজার হাজার লোক ইসলামের নৈতিক শক্তি এবং তার যথার্থ গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারলো। তারা বুঝতে পারলো যে, প্রবল সয়লাবের ন্যাগ অগ্রসরমান এই আন্দোলনের মুকাবিলা করা কোনো চাট্টিখানি কথা নয়। কাইসারের পক্ষ থেকে হামলার প্রস্তুতি পর বছরই রোম সম্রাট কাইসার মুসলমানদের কাছ থেকে মুতা’ যুদ্ধের প্রতিশোধ গ্রহণের জন্যে সিরীয় সীমান্তে সামরিক প্রস্তুতি শুরু করে দিলো এবং তার অধীনস্থ আরব গোত্রসমূহের নিকট থেকে সৈন্য সংগ্রহ করতে লাগলো। এ প্রস্তুতির কথা নবী করীম (স) যথাযময়ে জানতে পারলেন। এ মুহূর্তটি ছিলো মুসলমানদের পক্ষে অত্যন্ত সংকটজনক। এ সময়ে সামান্য মাত্র গাফলতি দেখালেও সমস্ত কাজ বানচাল হয়ে যাবার সম্ভাবনা ছিলো। একদিকে মক্কা অভিযান ও হুনাইন যুদ্ধে পরাজিত আরব গোত্রগুলো মাথা তুলে দাঁড়াতো, অন্যদিকে শত্রু পক্ষের সঙ্গে সংযোগ রক্ষাকারী মদীনার মুনাফিকরাও ঠিক মাহেন্দ্রক্ষণে ইসলামী সমাজের মধ্যে ভয়ঙ্কর ফাসাদ সৃষ্টি করে দিতো। তার ফলে যুগপৎ আন্দোলন ও সংগঠনকে সামলানোই অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়তো। এমনি সময়ে রোমক শক্তির সর্বাত্নক হামলার মুকাবিলা করা মোটেই সহজ ব্যাপার ছিলো না। এমন কি, এই বিরাট হামলা মুকাবিলা করা মোটেই সহজ ব্যাপার ছিলো না। এমন কি, এই বিরাট হামলার মুকাবিলা করতে না পেরে কুফরের কাছে ইসলামী আন্দোলনের পরাজিত হবার আশংকা পর্যন্ত ছিলো। এ সমস্ত কারণেই হযরত (স) তাঁর খোদা-প্রদত্ত অতুলনীয় দূরদৃষ্টির বলে অবিলম্বে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করলেন যে, এ সময় কাইসার বাহিনীর মুকাবিলা করাই সমীচীন। কারণ এ সময় আমাদের সামান্য মাত্র দুর্বলতা প্রকাশ পেলেও এতদিনের গড়া সমস্ত কাজ বানচাল হয়ে যেতে পারে।