Jump to content

Draft:Kavi Ganesh Basu

From Wikipedia, the free encyclopedia

কবি গণেশ বসু জন্ম : ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দের ১ ডিসেম্বর, অবিভক্ত বাংলার বরিশাল জেলায়।

পিতা : সুমন্তনাথ বসু মজুমদার।

মাতা : পারুলদেবী।

সন্তান : কনীনিকা বসু ও কৌস্তব বসু।

শিক্ষা : প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা শুরু হয় ভবানীপুর নাসিরুদ্দিন মেমোরিয়াল স্কুলে। এরপর দেশপ্রাণ বীরেন্দ্রনাথ ইনস্টিটিউশন থেকে স্কুল ফাইন্যাল। চারুচন্দ্র কলেজ থেকে বি.এ. এবং কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম.এ. পাশ করেন।

কর্মজীবন : গণেশ বসু জন্মগ্রহণ করেছিলেন এক জমিদার পরিবারে। কিন্তু বেশিদিন জমিদারি সচ্ছলতা ভোগ করতে পারেননি। দেশভাগের অভিশাপ বহন ১৯৪৮-এ ভারতে চলে আসতে বাধ্য হন। এরপর শুরু হয় ছিন্নমূল জীবনের যন্ত্রণা। একটু মাথা গোঁজার ঠাঁইয়ের জন্য ভেসে বেড়ান এখানে ওখানে। কখনো আত্মীয়ের বাড়িতে অনুগ্রহ-প্রত্যাশী, কখনো সস্তার ভাড়াবাড়িতে দিনযাপন। সীমাহীন দারিদ্রের কারণে শৈশবেই নেমে পড়তে হয় কাজে। খবরের কাগজের ঠোঙা বানিয়ে তা দোকানে দোকানে বিক্রি করতেন। দু'বেলা পেটভরে খেতে পর্যন্ত পেতেন না। কোনোদিন খুদের জাউ খেয়ে থাকতেন, কোনোদিন কাটতো শুধু মুড়ি চিবিয়ে। জীবিকার জন্য জীবনে নানাধরণের কাজ করেছেন। টিউশন পড়ানো থেকে শুরু করে মোটরগাড়ি সারাইয়ের কারখানায় কাজ, ভিন্ রাজ্যে গিয়ে ওয়ার্ক সুপারভাইজারের কাজ, সাউথ সাবার্বান মেন স্কুলে শিক্ষকতা, 'অমৃত' পত্রিকায় সাংবাদিকতা। অবশেষে রাষ্ট্রগুরু সুরেন্দ্রনাথ কলেজে অধ্যাপনার কাজে যোগ দেন ১৯৭০-এ। বার্লিনের ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউশন অব জার্নালিজম-এর আমন্ত্রণে সাংবাদিকতায় ট্রেনিং নিতে তিনি ১৯৭২ ও ১৯৭৩-এ জার্মানি গিয়েছিলেন। ২০২৩-এর ১০ নভেম্বর তাঁর জীবনাবসান হয়। সাহিত্যকর্ম : মার্কসীয় মনোভাবাপন্ন এই কবির কাব্যসাধনা শুরু হয় প্রেমের কাব্য রচনা করে। যদিও সেই প্রেম নিছক ব্যক্তিগত প্রেম-ভালোবাসার গণ্ডিতে আবদ্ধ না থেকে স্বদেশপ্রেমে উন্নীত হয়। খাদ্য আন্দোলন, নকশাল আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে তাঁর কবিতা ফসফরাসের মতো জ্বলে উঠেছিল। তাঁর বিখ্যাত কবিতা 'সমুদ্রমহিষ' পড়ে মুগ্ধ হয়েছিলেন অগ্রজ কবি বিষ্ণু দে। একটি আস্ত কবিতা লিখে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন গণেশ বসুকে। কবিতাটি একসময় কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠক্রমেও স্থান পেয়েছিল। তিনি মানবতাবাদী কবি। স্বৈরাচারী শাসকের বিরুদ্ধে সর্বদায় ছিলেন সোচ্চার। এমনকি নিজে বামপন্থী মতবাদে বিশ্বাসী হওয়া সত্ত্বেও আদর্শচ্যুত বামপন্থী শাসকের সমালোচনা করতেও পিছুপা হননি। শাসকের ভয়ে কিংবা পুরষ্কারের লোভে তিনি কখনো নিজের লেখনীর অভিমুখ বদল করেননি। বৃদ্ধ জরাগ্রস্ত, একাকীত্বের যন্ত্রণায় ক্ষতবিক্ষত হয়েও সাহিত্যসাধনায় মগ্ন ছিলেন। তাঁর কবিতা দেশ ও কালের এক যন্ত্রণাদীর্ণ অধ্যায়কে তুলে ধরে। এই বিপন্ন মানবতার যুগে তাঁর কবিতা যেন মূর্তিমান বিবেক, সমকালীন দমবন্ধ করা প্রতিবেশে একরাশ খোলা হাওয়া।

গ্রন্থতালিকা : মোট ২১টি কাব্যগ্রন্থ রচনা করেন – ‘বনানীকে কবিতাগুচ্ছ’ (১৯৬৪), ‘নিজের মুখোমুখি’ (১৯৬৭), ‘রক্তের ভিতরে রৌদ্র’ (১৯৬৯), ‘লেনিন : অধিকার রক্তের কবিতার’ (১৯৭০), ‘অমৃত আস্বাদে মৃত্যু বাংলাদেশ’ (১৯৭১), ‘বাঘের থাবার নিচে’ (১৯৮২), ‘নীরব সন্ত্রাস’ (১৯৯৯), ‘অন্ন অশ্রু ভায়োলিন’ (২০০৫), ‘ভাসান দরিয়া’ (২০০৮), ‘ভাঙা বইঠার গান’ (২০১১), ‘বর্ণময় পৃথিবী’ (২০১৩), ‘বলগা হরিণের শিং’ (২০১৫), ‘আপাতত’ (২০১৬), ‘মেনুতে মেঘমালা’ (২০১৭), ‘শহিদ চড়ুই’ (২০১৮), ‘মানবতা অদ্ভুত নীরব’ (২০১৯), ‘ডিকটেটর’ (২০২০), ‘করুণ ক্যাকটাস’ (২০২১-২২), ‘অন্তিম আলোয়’ (২০২১-২২), ‘দাদানের দরবারে’ (২০২১-২২), কবিতা সংগ্রহ - তৃতীয় খণ্ড (২০২৩)। লেখেন দু’টি প্রবন্ধগ্রন্থ – ‘নরকরোটিতে প্রজাপতি’ (২০১১) ও ‘সাংবাদিকতায় কার্ল মার্কস’ (২০২০)।

পুরষ্কার ও সম্মাননা : মঙ্গলাচরণ স্মৃতি পুরষ্কার (২০০৬), রায়গুণাকর ভারতচন্দ্র স্মৃতি পুরষ্কার (২০১৮), উজ্জ্বলকুমার মজুমদার পুরষ্কার (২০২৩)।